অর্থনীতির ধাক্কা কাটাতে সরকারের করণীয় কী?
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক জটিল সময় অতিক্রম করছে। দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির ধারা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, এবং বেকারত্বের বাড়তি চাপ। এসব চ্যালেঞ্জ শুধু পরিসংখ্যানগত নয়—এগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সময় বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সংস্কারের। কারণ সাময়িক আর্থিক সহায়তা বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে অর্থনীতির প্রকৃত ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ
দীর্ঘদিন ধরে বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ অব্যাহত। একদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনে বিপাকে।
সরকারের উচিত—
- বাজার মনিটরিংকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা,
- অতি প্রয়োজনীয় পণ্যে ভর্তুকি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চালু করা,
- কৃষি উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনকে শক্তিশালী করা,
যাতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব সরাসরি কমানো যায়।
রিজার্ভ সংকট: আমদানি ও রপ্তানির ভারসাম্য
রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ তুলনামূলক দুর্বল।
- তৈরি পোশাকের বাইরে নতুন রপ্তানি খাত—আইটি, ফার্মাসিউটিক্যাল, কৃষিপণ্য—উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে।
- বিদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের উৎসাহিত করতে আরও সহজ ব্যাংকিং ও ইনসেনটিভ ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
- অপ্রয়োজনীয় বিলাসপণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
বেকারত্ব কমাতে দক্ষতা উন্নয়ন
প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।
- কারিগরি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণকে জাতীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতের জন্য সহজ ঋণ ও ট্যাক্স সুবিধা দিতে হবে।
- সরকারি প্রকল্পে স্থানীয় কর্মসংস্থান বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি নীতি সংস্কারের প্রয়োজন
অর্থনীতিকে টেকসই করতে প্রয়োজন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সঠিক পরিকল্পনা।
- অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে ডেটা-ভিত্তিক নীতি প্রণয়ন অপরিহার্য।
- কর ব্যবস্থায় সংস্কার এনে মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চাপ কমানো উচিত।
- রাষ্ট্রীয় খরচে অপচয় নিয়ন্ত্রণ ও প্রকল্পের দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও সম্ভাবনাময়। তবে সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে এখনই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—যা হয়তো জনপ্রিয় হবে না, কিন্তু প্রয়োজনীয় হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ও রিজার্ভ স্থিতিশীলতা—এই তিন দিকের সমন্বয়ই হতে পারে আগামী দিনের অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের মূল চাবিকাঠি।