মাদাগাস্কারে জেন-জির আন্দোলনে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার দেশত্যাগ
আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারে তুমুল সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ফরাসি সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে তিনি রোববার রাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি রান্দ্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো বলেন, সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট বিদ্রোহ ঘোষণা করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পরই রাজোয়েলিনা দেশ ছাড়েন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছি—তারা নিশ্চিত করেছে যে তিনি আর দেশে নেই।” তবে বর্তমানে রাজোয়েলিনা কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়, সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সেই ভাষণ আর দেওয়া হয়নি এবং সরকারি কোনো ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি।
রয়টার্সের সামরিক সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা ফরাসি সেনাবাহিনীর বিমানে চড়ে দেশ ছাড়েন। এদিকে ফরাসি রেডিও আরএফআই জানিয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনার পর রাজোয়েলিনা প্যারিসে আশ্রয় নেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাদাগাস্কারে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়, যা মূলত পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে তরুণ প্রজন্মের, বিশেষ করে জেন-জি (Gen Z) প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হয়। পরবর্তীতে বিক্ষোভের পরিধি বাড়তে থাকে—দুর্নীতি, সরকারি ব্যর্থতা, এবং মৌলিক সেবার ঘাটতির মতো ইস্যুগুলো আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, আন্দোলন শুরুর পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। মাদাগাস্কারের এই তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন আফ্রিকার বাইরেও প্রতিধ্বনি তুলেছে—নেপাল, কেনিয়া ও মরক্কোতেও তরুণদের প্রতিবাদে এ ঘটনার প্রভাব পড়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার এই দ্বীপরাষ্ট্রে গড় বয়স ২০ বছরেরও কম। জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভ্যানিলা উৎপাদক এই দেশটির অর্থনীতি এখন মূলত নিকেল, কোবাল্ট, বস্ত্র ও চিংড়ি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।